স্তন ক্যান্সার সৃষ্টি হয় স্তনের কোষসমষ্টি সাধারনত: নালী (নালী যেগুলি দুগ্ধ স্তনবৃন্ত পর্যন্ত সরবরাহ করে) এবং গ্রন্থিগুলিতে (গ্রন্থি যেগুলি দুগ্ধ উৎপন্ন করে)। এটি পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যদিও পুরুষদের স্তন ক্যান্সার খুবই বিরল।
বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সার দেখা যায় :
ডাক্টাল কার্সিনমাস : নালী থেকে যে ক্যান্সার উৎপন্ন হয় ।
লবিউলার কার্সিনমাস : গ্রন্থি থেকে যে ক্যান্সার উৎপন্ন হয় ।
তথ্যসূত্র :
www.cdc.gov
www.cancer.gov
www.who.int
www.health.puducherry.gov.in
www.breastcancer.org
সবচেয়ে লক্ষণীয় উপসর্গ হল স্তনে ডেলা বা পিণ্ড আকৃতি(লাম্প)তৈরী হওয়া যেটি স্তনের বাকি কোষসমষ্টি থেকে আলাদা ভাবে অনুভব করা যায়। ডেলা বা পিণ্ড আকৃতি(লাম্প)ছাড়া আর অন্যান্য উপসর্গগুলি হল :
তথ্যসূত্র :
www.merckmanuals.com
স্তন ক্যান্সারের জন্য সঠিক কারণ এখনো জানা যায় নি কিন্তু এই রোগের সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কারনগুলি হল :
১. বয়স: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা থাকে। স্তন ক্যান্সার ৫০ বছরের উর্দ্ধে মহিলাদের মধ্যে যাদের মেনোপজ হয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
২. ইস্ট্রজেনের মাত্রা: যখন শরীরে উচ্চ মাত্রার ইস্ট্রজেন দেখা যায়। এটি তাড়াতাড়ি মাসিক শুরু হওয়া এবং দেরীতে মেনোপজ হওয়ার কারণে ঘটতে পারে। এছাড়াও সন্তান না হওয়া বা বেশী বয়সে সন্তান হওয়ার কারনে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে কারন গর্ভাবস্থায় শরীরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ইস্ট্রজেনের প্রভাব থাকে।
৩. পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারে স্তন ক্যান্সার বা জরায়ু ক্যান্সারের ইতিহাস থেকে থাকে,সেখানে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশী করে দেখা যায়। বি আর সি এ ১(BRCA1) এবং বি আর সি এ ২(BRCA2) হিসাবে পরিচিত বিশেষ জিন, স্তন এবং জরায়ু উভয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এই জিন পিতামাতা থেকে তাদের সন্তানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকে। এছাড়াও একটি তৃতীয় জিন টি পি ৫৩(TP53) স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৪. মদ্যপান : মদ্যপেয়ীদের মদ্যপানের মাত্রার উপর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে যায়।
৫. ধূমপান: ধূমপানের উপর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
৫. রেডিয়েশান (বিকিরণ): কিছু চিকিৎসা পদ্ধতিতে রেডিয়েশান (বিকিরণ) ব্যবহার করা হয় , যেমন এক্স-রে এবং সিটি স্ক্যান ইত্যাদি ,যাতে সামান্য হলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
তথ্যসূত্র : www.nhs.uk
আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন: যদি কোনো ধরনের উপসর্গ যেমন ডেলা বা পিণ্ড আকৃতি (লাম্প)তৈরি হয় বা স্তনের রঙ বা আকারের পরিবর্তন দেখা যায় তবে আপনি আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
ইমেজিং: ম্যামোগ্রাফি এবং স্তনের আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়। আল্ট্রাসাউন্ডে উচ্চ কম্পাঙ্ক যুক্ত শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার হয় যা আপনার স্তনের অভ্যন্তরের একটি ছবি তৈরি করে।উৎপন্ন ছবিটি আপনার স্তনে কোনো ফোলা বা ডেলা বাঁধা বা অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখিয়ে দেয়। আপনার চিকিৎসক স্তনের আল্ট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দিতে পারেন যাতে তারা আপনার স্তনের মধ্যে ডেলা বা পিণ্ড অকৃতিটি(লাম্প)কঠিন বা তরল অবস্থায় রয়েছে কি না তা জানতে পারেন।
আণুবীক্ষণিক বিশ্লেষণ: বায়োপসি সাধারণত তখনই করা হয় যখন মেমোগ্রামস এবং অন্যান্য ইমেজিং পরীক্ষা, বা শারীরিক পরীক্ষা যার দ্বারা স্তনের পরিবর্তন (বা অস্বাভাবিকতা) খুঁজে বের করে সম্ভবত ক্যান্সার হয়েছে বলে ধরা হয়। বায়োপসি হল একমাত্র উপায় যার দ্বারা ক্যান্সার সত্যিকারের হয়েছে কিনা তা জানা যায়।
তথ্যসূত্র : www.nhs.uk
স্তন ক্যান্সারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান চিকিৎসাগুলি হল :
১. অস্ত্রোপ্রচার : অস্ত্রোপ্রচারের দ্বারা সাধারনত:চারপাশের কোষসহ টিউমারকে শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয়।
২. রেডিওথেরাপি : অস্ত্রোপ্রচারের পর টিউমার যেখানে হয়েছিল সেই জায়গায় এবং স্থানীয় লসিকা গ্রন্থিগুলিতে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয় যাতে অস্ত্রোপ্রচারের পরও থেকে যাওয়া টিউমার কোষগুলিকে ধ্বংস করা যায়।
৩. কেমোথেরাপি : সাধারনত:রোগের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ স্তরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, এতে ঋনাত্ম্ক ইস্ট্রজেন গ্রাহী রোগের (ER-) ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকার হয়। এগুলি ৩ থেকে ৬ থেকে মাসের মধ্যে পরপর দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র :
www.breastcancer.org
www.cancer.org
১. সকল বয়সের সকল মহিলাদের প্রাত্যহিক ব্যয়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
২. যেসকল মহিলারা তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না তাদের থেকে যেসকল মহিলারা তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের সম্ভবনা কম থাকে, কারন যখন মহিলারা তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান তখন তাদের নিয়মিত ডিম্বানু নি:সরন হয় না এবং ইস্ট্রজেনের মাত্রা ঠিক থাকে।
৩. স্তনের নিজ-পরীক্ষা (ব্রেস্ট সেল্ফ এক্সামিনেশান)যার দ্বারা প্রত্যেক মাসের একই সময়ে স্তন পরীক্ষা করে কোনো ডেলা বা পিন্ড আকৃতি তৈরি হয়েছে কিনা বা কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা বোঝা যায়।